বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » রাশিয়া-বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ করতে চাই
রাশিয়া-বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ করতে চাই
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকা: প্রতিযোগিতামূলক দামে বাংলাদেশের কাছে সূর্যমুখী তেল, মসুর ডাল ও ছোলা বিক্রি করতে চায় রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সফরের আগে ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাস বাংলাদেশকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওই পণ্যগুলো সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় আসছেন। রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম ঢাকা সফর।
এ সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনীতি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোতে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সের্গেই লাভরভ ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মসূচির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
লাভরভের বাংলাদেশ সফরে আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা এবং আরো উন্নতির সম্ভাবনাগুলো বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
মুখপাত্র আরো বলেন, উভয় পক্ষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো নিয়েও মতবিনিময় করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকবার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই আলোকেই বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরতে পারে।
আঞ্চলিক ইস্যু হিসেবে উঠতে পারে রোহিঙ্গা সংকট।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের যেসব জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। দ্রুত যেন শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করে, সে জন্য আমরা রাশিয়াকে অনুরোধ করতে পারি।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খাদ্য, সার ও জ্বালানির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে সমস্যা আছে আমরা তা তুলে ধরব।
’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, লাভরভের সফরের আগমুহূর্তে রাশিয়া প্রতিযোগিতামূলক দামে বাংলাদেশকে খাদ্যশস্য রপ্তানির যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি এ দেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এই খাদ্যপণ্যগুলো আমদানি করে। রাশিয়া থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে খাদ্যপণ্যগুলো পাওয়ার নিশ্চয়তা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির হতে পারে। তবে ওই পণ্যের দাম কিভাবে পরিশোধ করা হবে, সেটা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে এরই মধ্যে লেনদেনে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি লেনদেন করা যাচ্ছে না।
রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই দেশ থেকেই বাংলাদেশ খাদ্যশস্য আমদানি করে। যুদ্ধের পটভূমিতে ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে রাশিয়ার বিধি-নিষেধের কারণে ওই দেশ থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী পণ্যের দামও বেড়ে যায়। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনে রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যে সমঝোতা গত বছরের ২২ জুলাই থেকে এ বছরের ১৭ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ওই সমঝোতার সুবিধাভোগী শীর্ষ ১০ দেশের অন্যতম বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তুরস্ক ও জাতিসংঘ আবারও রাশিয়াকে ওই সমঝোতায় ফেরানোর চেষ্টা করছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো সমঝোতায় না ফেরার ব্যাপারে অনড়। সমঝোতা হলে ইউক্রেন থেকেও পণ্য আমদানির সুযোগ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানিতে বড় সমস্যা হলো মূল্য পরিশোধে জটিলতা। অনেক পশ্চিমা দেশ রাশিয়াকে বাণিজ্যিকভাবেও বর্জনের পক্ষে। রাশিয়ার সঙ্গে কারা কী ধরনের বাণিজ্য করছে সে দিকেও তারা দৃষ্টি রাখছে। এ ছাড়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করাও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় থাকা কোনো জাহাজে করে পণ্য আসছে কি না তা-ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। তা না হলে বাংলাদেশেরও নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মাণাধীন রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্র নিয়েও আলোচনা হতে পারে। রাশিয়ার রোসাটম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। রোসাটমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অঙ্গনে বেশ চাপের মুখে আছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে বিভিন্ন প্রস্তাব আনছে। বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপরও চাপ বাড়ছে। আজকের বৈঠকে বৈশ্বিক অঙ্গনে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রাশিয়া দাবি করে থাকে, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো তাদের নীতি নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তত্পরতার বিরুদ্ধে রাশিয়া সরব হয়েছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামীকাল শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। বিকেলে তিনি জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি যাবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ওই সম্মেলনে যাচ্ছেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।