মঙ্গলবার, ১ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » অস্ট্রেলিয়া | এক্সক্লুসিভ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাহিত্য ও সংস্কৃতি » ঢাকার যানজট ও একটি প্রত্যাশা- মূনির হোসেন
ঢাকার যানজট ও একটি প্রত্যাশা- মূনির হোসেন
বিবিসি২৪নিউজ,এমডি জালাল, ঢাকা: জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী জনসংখ্যার দিক থেকে এক লাখ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ পৃথিবীর দশম বৃহত্তম দেশ। এই দেশের অন্যতম প্রধাণ আয় হচ্ছে ফরেন রেমিট্যান্স। গত অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দেশে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স ২২বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের সুস্থ, সবল, আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি আমাদের জন্য এই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। তাই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জাতি গঠনে সুস্থ, সবল, আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি আমাদের সম্পদ।
স্বাধীনতা পরবর্তী এই বাংলাদেশ ছিল দারিদ্র পীড়িত একটা জনপদ। ফলে জনস্বাস্থ্যের অবস্থাও ভালো ছিল না। আমরা খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করলেও ইদানীং নিরাপদ খাদ্য ও পানীয়ের সংস্থান নিয়ে লড়াই করছি। পাশাপাশি জীবনাচরণের পরিবর্তন এনে ধাপে ধাপে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ জাতি গঠনের দিকে এগিয়ে নিতে অবিরাম চেষ্টা করে চলেছি।
বিশ্বের অন্যতম বায়ু দূষিত নগর হচ্ছে আমাদের রাজধানী ঢাকা। ফলে নগরীতে হৃদরোগ, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট জনিত নানা রোগ, স্ট্রোক, চোখে ছানি পড়া, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের সমস্যার মত অসুখগুলো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বায়ু দূষণের অন্যতম ৫ টি প্রত্যক্ষ কারণের দুইটি হচ্ছে যানজট, গাড়িতে অনুন্নত জ্বালানীর ব্যবহার।
এক হিসেবে দেখা গেছে, ৮১৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ। কর্মঘন্টায় এই মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি চলে যায়। যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে। পাশাপাশি যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে বলে ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়। এ বিষয়ে বিবিসি২৪নিউজ কার্যালয় এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
মোহাম্মদ মূনির হোসেন ও তার সহধর্মিণী: বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তিনি জন্মগত ভাবে পুরানো ঢাকার মানুষ। তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে তার পরিবার সহ বাস করছেন বিগত ২৯ বছরের অধিক সময় ধরে এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ার মূল ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তিনি অস্ট্রেলিয়া ফেডারেশন পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সম্পাদক।
মূনির হোসেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা এবং ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির উপদেষ্টা।
তিনি মনে প্রানে বাংলাদেশকে ভালবেসে তিনি দুনিয়ার যেখানেই সাহায্য প্রার্থনা করে তিনি সব সময়ই সবাইকে সাহায্য করেন। জাতীর পিতার আদর্শ তার জীবনের অংশের নাম।
তিনি আমাদের নেত্রী শেহ হাসিনার একজন অনুসারী এবং সারা দুনিয়ায় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং নেত্রীর কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন সব সময়ই।
২০০৬ সালে নেত্রীকে গ্রেফতার করা হলে মূনির হোসেন এবং তার স্ত্রী আইভি রহমান ততকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আলেকজান্ডার ডাওনার কে চিঠি দিয়েছিলেন এবং মন্ত্রী উত্তর প্রদান করেছিলেন। যে অস্ট্রেলিয়া সরকার আমাদের সুযোগ্যা নেত্রীর পাশে আছে। তিনি বলেন,
গতবছর লন্ডনে গিয়েছিলাম নেত্রীর সাথে দেখা করার জন্যই সময় ও বাড়িয়েছিলাম টিকিটের কিন্তু তখন রানীর মৃত্যুর কারণে সকল প্রকার সভা পন্ড হয়ে যায়। তাই কথা হয়নি। তিনি দুই সন্তানের পিতা এবং একজন সফল ব্যবসায়ী।
মূনির হোসেন ভ্রমণ প্রিয় এবং তিনি দুনিয়ার ১০০ টা দেশ ভ্রমন করেছেন আর তিনি যেখানেই গেছেন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন উনার কাজে কথায় এবং উদারতার…. অস্ট্রেলিয়া প্রথম বাংলাদেশি পতাকা রাষ্ট্রীয় ভাবে স্থান করে দেন। এছাড়াও সিডনিতে বিভিন্ন রাস্তা ও শহরে বাংলাদেশের নামকরণ করার আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী একজন আইনজীবী সে বাঙালিদের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি জানান যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নমিনেশন দেন এবং পাস করে
ক্ষমতা আসতে পারেন তাহলে- নগরীর যানজট কমানো, কর্মঘন্টা বাড়ানো আর রোগ বালাই কমাতে উন্নত দেশগুলো কী কী করছে সে ভাবে বাংলাদেশের জন্য কাজ করবেন। তাঁর স্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের ক্ষমতায়নে যে কাজ করছে যা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোড মডেল। আমরা বিদেশে থেকে দেশকে নিয়ে গর্ব করি। তিনি আরও বলেন, ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনকে বলা হয় ‘বিশ্বের সাইকেলিং রাজধানী’। সেখানে প্রতি ৩ জনের ২ জন তাদের দৈনন্দিন চলাচলে গন্তব্যে পৌঁছাতে সাইকেল ব্যবহার করে নিজেদের শরীর স্বাস্থ্য যেমন ঠিক রাখেন তেমনি যানজট কমিয়ে কর্মঘন্টা বাড়িয়ে ফেলেন। এটা দেখে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মেয়রের উদ্যোগে নতুন যানবাহন পরিকল্পনা নিয়েছেন। যার ফলে, প্যারিসে ২০১৯ সালে বাই সাইকেলের ব্যবহার ৫৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। দেশের অন্য এলাকায় এই হার কম থাকলেও প্যারিসে তা খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সরকারিভাবে নগরবাসীকে বাই সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করে এটা ব্যবহারের নানা উপকারিতার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ফলে শুধু গত বছর অক্টোবরে ২ লাখ বাই সাইকেল বিক্রি হয়েছে সেখানে। বাইকারদের সুবিধার জন্য নানা সমালোচনার পর নগরীতে ১ হাজার কিলোমিটার নতুন বাইক লেন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে যার ৩৭ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ১০ হাজার সাইকেল পার্কিং এর জায়গা তৈরি করা হয়েছে। তারা দেখেছেন যে, বাই সাইকেলে গাড়ির চেয়ে দ্রুততার সাথে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
পরিবেশ-বান্ধব বাহন হিসেবে বিশ্বজুড়েই বাইসাইকেলের কদর বেশ। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৮ দেশে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে। শীর্ষ দুই অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে তাইওয়ান ও কম্বোডিয়া। ইউরোপিয়ান কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ইইউর বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০১৭ সালে ১০৮ কোটি ইউরোর বাইসাইকেল কিনেছে ইইউভুক্ত ২৮ দেশ।
ইউরোপের দেশগুলোতে সাইকেল কেন জনপ্রিয় হচ্ছে তার কারণ হিসেবে মোটা-দাগে যা জানা গেছে তা হচ্ছে: ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বের না করেই তা সম্পন্ন করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, নগরীর যানজট কমিয়ে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো, নগরের বা শহরের পরিবেশ রক্ষা, গাড়ি কেনা ও মেইনটেন করার মত খরচ বাঁচিয়ে পারিবারিক ব্যয় কমানো, বায়ূ দুসন জনিত রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করা, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের মাধ্যমে নিজের উপর থেকে সরকারি করের বোঝা কমানো, জীবনের কর্মক্ষম সময়কে লম্বা করে নেওয়া, দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখা, ইত্যাদিই প্রধান।
ঢাকায় যারাই নির্বাচিত হউন না কেন তাদের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার কোন কমতি নেই। তারা আমাদের নগরীকে কীভাবে গড়ে তুলতে চান তার পরিকল্পনার মধ্যে এমন কিছু আছে কি না তা আমরা জানি না। কিন্তু ভালো কিছুর প্রত্যাশা করার অধিকার আমাদের আছে, তাই আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি একটা যানজট মুক্ত কম বায়ু দূষিত সুন্দর ঢাকা মহানগরীর।মূনির হোসেন এবং তার স্ত্রী আইভি রহমানের একান্ত ইচ্ছা তাদের প্রানপ্রিয় নেত্রীর সাথে একবার দেখা করার।তারা সেই জন্যই এবারে বাংলাদেশে এসেছেন।