শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বিদেশিদের ‘বাড়াড়িতে’ সরকার ক্ষুব্ধ ও বিব্রত
বিদেশিদের ‘বাড়াড়িতে’ সরকার ক্ষুব্ধ ও বিব্রত
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকা: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলোর আগ্রহ বেশ। দেশের দুই শীর্ষ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে একাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে বিবৃতিও দিয়েছেন কূটনীতিকরা। তবে বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না সরকার। বিদেশিদের ‘বাড়াড়িতে’ সরকার ক্ষুব্ধ ও বিব্রত। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ প্রতিনিধিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ডেকে ঢাকার পক্ষ থেকে অসন্তোষও জানানো হয়েছে।
যদিও সামনে জাতীয় নির্বাচন- তাই জবাবগুলো কঠোরভাবে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বিদেশিদের হস্তক্ষেপকে তীর্যক দৃষ্টিতেই দেখছে সরকার। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পাশপাশি সরকারের মন্ত্রীরাও সমালোচনায় মুখর।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে অস্বস্তি ও ক্ষোভের কথা জানা গেছে।
আর সরকারের ক্ষোভের বিষয়টি গতকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈশ্বিক এত সংকটেও বাংলাদেশ নিয়ে ক্ষমতাধরদের মাথাব্যাথা। একই ইস্যুতে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রীও। তিনি বিদেশিদের এসব বাড়াবাড়িকে অস্বাভাবিক মনে করছেন। তিনি বলেন, বিদেশিরা নিজেদের সম্রাট মনে করে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে কূটনীতিকদের এসব আচরণকে ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার আহ্বান জানান ওই বিবৃতিতে। এটি বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য একটি সতর্ক বার্তাও।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক বেড়েছে কূটনীতিকদের। কখনো সরকারি দল, আবার কখনো বিরোধী দলের সঙ্গে বসছেন প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রভাব বেশ। আর বিএনপি বিষয়টিকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছে ক্ষমতাসীন দলের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য।
তবে এসব চাপ কাটাতে আন্তর্জাতিক লবিং অব্যাহত রেখেছে সরকারি দলও। এ নিয়ে অশান্তির মধ্য দিয়ে দিন কাটছে সরকারের। যদিও নির্বাচনের বাকি ৫-৬ মাস। এমন সময় ক্ষমতাসীনদের ওপর আরও চাপ বাড়াতে চায় রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। তারা বিভিন্ন দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে টালমাটাল করে দিতে চায়।
যা বললেন ওবায়দুল কাদের:
শুক্রবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব রাজনীতিতে অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। তা রেখে বিশ্বের বড় বড় নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর মাথাব্যথা বাংলাদেশ নিয়ে। দফায় দফায় বিদেশিরা আসছে, বিএনপিও দফা দিচ্ছে।’
ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী:
বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে মজা পায় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর আর কোথাও রাষ্ট্রদূতরা এভাবে দলবেঁধে মন্তব্য করে বেড়ায় না।
শুক্রবার দুপুরে সিলেট শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বক্তব্য দেওয়ার প্রেক্ষাপটে একথা বলেন মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪০ জনের মারা যাওয়া নিয়ে একটা দেশও কথা বলেনি। আমাদের দেশে কে কী করল, সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ বলে তারা এগুলো করছে। বিদেশিদের মন্তব্য গণমাধ্যমে অতিপ্রচার করার কারণে তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে মজা পায়।
তাদের এমন কার্যকলাপ ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ, যা কনভেনশনের ধারে-কাছেও নেই।
মোমেন বলেন, ‘তারা নিজেদের এ দেশের সম্রাট মনে করে।’
কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার আহবান তথ্যমন্ত্রীর
এদিকে রাষ্ট্রদূতদের দেওয়া বিবৃতিকে আচরণবিধি-সংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সাংবাদিকের স্মৃতি ভাষ্যে বঙ্গবন্ধু’ সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান মন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এ কথা জানানো হয়।
হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা যেভাবে বিবৃতি দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের মতো এমন জোটবদ্ধ হয়ে বিবৃতি দেওয়া রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধির যে ভিয়েনা কনভেনশন আছে, সেটির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে অনুরোধ জানাব ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার জন্য।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, ভারত কিংবা পাকিস্তানে যখন সহিংসতা হয়, কিংবা আশপাশের অন্য দেশে যখন সহিংসতা হয়, সেখানে রাষ্ট্রদূতেরা এ রকম বিবৃতি দেন না। আমাদের দেশে কেন এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে? আসলে আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের কেউ কেউ এগুলো দেওয়ার জন্য উসকানি দেয়।
সুতরাং রাষ্ট্রদূতদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার আগে তাদের যারা ‘প্রোভোক’ করে, তারা এই ক্ষেত্রে দায়ী। তবে অবশ্যই কূটনীতির বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা প্রয়োজন।’
এদিকে বিদেশি কুটনীতিকদের নিয়ে অস্বস্তির মধ্যেও গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই দিন বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন কুক।
এর এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় সিরিজ বৈঠক করেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া।