মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় কূটনীতিকরা
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় কূটনীতিকরা
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক,ঢাকা: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে শক্তিশালী একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে।
প্রতিনিধি দলটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুসন্ধানী মিশন তাদের সফরের দ্বিতীয় দিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছে। ইইউ প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে। বিদেশিদের এমন তৎপরতার সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে।
উজরা জেয়ার প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারত থেকে ঢাকায় পৌঁছবে। এ দলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারা ভারতে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে আলোচনা করেছেন।
ঢাকায় পৌঁছার পরপরই প্রতিনিধি দলের দুই সদস্য কক্সবাজার যাবেন। সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে উজরা জেয়া পরের দিন বুধবার সকালে কক্সবাজার যাবেন।
ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দল সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক হবে।
এছাড়া রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর উপলক্ষ্যে ঢাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিনিধি দলের তরফে সম্ভাব্য প্রশ্নের জবাবও প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রস্তুতির লক্ষ্যে সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় একটি বৈঠক হয়। সেখানে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সম্ভাব্য প্রশ্নের জবাব নিয়ে আলোচনা হয়।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তরফে তাদের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সহিংসতা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হবে।
এছাড়া নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন, উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রভৃতি বিষয়ে সম্ভাব্য প্রশ্নের জবাব সরকার প্রস্তুত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। এই লক্ষ্যে গত ২৪ মে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। কেউ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেবে না।
মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে ইইউ’র বৈঠক: বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা সেই পর্যালোচনার অংশ হিসাবে সোমবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বৈঠকের বিষয়ে বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগামী সংসদ নির্বাচনে তাদের টিম পাঠাবে কিনা সেই বিষয়ে মূল্যায়ন করতে এসেছেন। নির্বাচনি পরিবেশ যাচাই করতে চাইছেন। তারা জানতে চেয়েছেন আমরা কি মনে করি এখন? তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা? আমরা আমাদের অভিমত জানিয়েছি।
আমরা বলেছি, এ বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষে নানা বক্তব্য চলছে। আমরা বলেছি এটা ঠিক, এমনটা হতেই পারে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের আগের সময়ও এ ধরনের পক্ষ-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কমূলক উত্তেজনাপূর্ণ কথা অনেকে বলেছেন। এবারও বলা হচ্ছে। আমরা অপেক্ষায় আছি। আমরা মনে করি, প্রত্যেকেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হবেন। যে কোনো ধরনের আবেগ ও চিন্তার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় না রেখে দেশের মানুষের স্বার্থে তারা কথাবার্তা বলবেন। সমস্যার সমাধান করবেন। সুন্দর একটি নির্বাচন, ফ্রি এবং ফেয়ার ইলেকশন হবে এটাই আমরা প্রত্যাশা রাখি।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি, মনে হচ্ছে যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছি গত কয়েকটি নির্বাচনে যেখানে টুকিটাকি কিছু ঘটনা ছাড়া ঠিকভাবেই নির্বাচন হয়েছে। সেই হিসাবে বলা চলে, নির্বাচন হওয়ার মতো অবস্থা এখন বিরাজ করছে। নির্বাচন হতে পারে।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা, তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে কমিশনার বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা আছে কিনা, তা কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক দলকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈঠকে সব ধরনের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার ধারণা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে পারে। তবে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
ইইউ প্রতিনিধি দলের সাত সদস্য মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই বৈঠক এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়।
এর আগে সকালে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ইইউর প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছে।
পুলিশের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ : ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সোমবার দুপুর ২টার দিকে পুলিশ সদর দপ্তরে এ দলের সদস্যরা পৌঁছেন।
এ সময় তারা জানতে চেয়েছেন, নির্বাচনে পুলিশ কী ধরনের ভূমিকা পালন করে। পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে তারা যে আসা-যাওয়া করবেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তায় আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সঙ্গে বৈঠক: সোমবার প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
ইইউ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপকমিটির আহবায়ক মো. জমির ও সদস্য সচিব শাম্মি আহমেদ।
শাম্মি আহমেদ জানান, আমরা তাদের জানিয়েছি, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য আমরা তাদের অনুরোধ জানিয়েছি।