রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ইউক্রেন যুদ্ধ ৯ হাজার বেসামরিক লোক নিহত : জাতিসংঘ
ইউক্রেন যুদ্ধ ৯ হাজার বেসামরিক লোক নিহত : জাতিসংঘ
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিবেশী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০০ শিশুসহ ৯ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক লোক নিহত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ৫০০তম দিনে শুক্রবার এ হিসাব প্রকাশ করে জাতিসংঘ।
ইউক্রেনে জাতিসংঘের মানবাধিকার মনিটরিং মিশন (এইচআরএমএমইউ) এক বিবৃতিতে জানায়, এই যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানিতে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। এইচআরএমএমইউয়ের ডেপুটি হেড নোয়েল ক্যালহাউন বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) আমরা যুদ্ধের আরেকটি ভয়ংকর মাইলফলক অতিক্রম করছি। ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়ংকর হামলা চলছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউক্রেনে হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় গড়ে কম ছিল। তবে এই সংখ্যা মে এবং জুন মাসে আবার বাড়তে শুরু করেছে। পূর্ব ইউক্রেনের ক্রামতোর্স্কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৭ জুন চার শিশুসহ ১৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে বৃহস্পতিবার ভোরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১০ জন নিহত এবং আরো ৩৭ জন আহত হন। একে বেসামরিক অবকাঠামোতে সবচেয়ে বড় হামলা বলে অভিহিত করেছেন শহরের মেয়র। জাতিসংঘ বলেছে, হামলাটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন দ্বারা সুরক্ষিত একটি এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল। হামলায় একটি ঐতিহাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউক্রেনে জাতিসংঘের মনিটরিং মিশন আরো উল্লেখ করেছে, পূর্ব ইউক্রেনে গত আট বছরের তুলনায় গত ৫০০ দিনে তিনগুণ বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
রাশিয়া নিয়মিতভাবে ইউক্রেনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। নির্বিচারে আর্টিলারি এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো বেসামরিকদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠছে। বেসামরিক অবকাঠামো এবং সরবরাহ লাইনে হামলা চালিয়ে বেসামরিক মানুষকে বিদ্যুত্ ও পানি থেকে বঞ্চিত করেছে মস্কো। বুচা এবং মারিউপোলের মতো শহরগুলো গত বছর রাশিয়ান নৃশংসতার চরম শিকার হয়েছিল। সেখানে গণহত্যার এবং যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক।
এই অবস্থায় শুক্রবার ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘোষণায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। কারণ এই বোমা ব্যবহার করলে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়বে। ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার একটি কনভেনশনে ১২০টিরও বেশি দেশ যোগ দিয়েছে। এসব দেশ এই অস্ত্র ব্যবহার, উত্পাদন, স্থানান্তর বা মজুত না করতে এবং ব্যবহূত বোমা নিষ্ক্রিয় করতে সম্মত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউক্রেন এতে স্বাক্ষর করেনি।
ক্লাস্টার বোমা কী : ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র হলো একটি বোমা যা বাতাসে উন্মুক্ত হয় এবং বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছোট ছোট ‘বোমা’ ছিটিয়ে দেয়। বোমাগুলো একই সময়ে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, যেমন—ট্যাংক ও সামরিক সরঞ্জাম। যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্ররা ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে যে কামানগুলো সরবরাহ করেছে (যেমন হাউইটজার) তা একটি সাধারণ ১৫৫ মিমি গোলার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ক্লাস্টার বোমার ভিত্তিও একই। ইতিমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে এমন গোলার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
ইউক্রেনকে ৫০ কোটি ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ দেবে ন্যাটো : ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত ৫০ কোটি ইউরো বা ৫৪ কোটিরও বেশি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ প্রস্তুত করছে ন্যাটো। শুক্রবার ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটোর দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য জ্বালানি, খুচরা যন্ত্রাংশ, চিকিত্সা সরঞ্জাম, ডিমাইনিং সরঞ্জাম ও পন্টুন সেতুসহ ৫০ কোটি ইউরো সহায়তার একটি নতুন জরুরি প্যাকেজ প্রস্তুত করছে। তাছাড়া সামরিক হাসপাতাল নির্মাণেও ইউক্রেনকে সহায়তা করেছে ন্যাটো।
এদিকে, আগামী ১১-১২ জুলাই লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে হতে যাওয়া ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে আরো বেশি উদার ও একত্র হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার স্লোভাকিয়ায় পৌঁছানোর পর এমন আহ্বান জানান তিনি। আসন্ন ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনকে জোটের ভবিষ্যত্ সদস্যপদ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট জুজানা ক্যাপুতোভা। স্লোভাকিয়ায় যাওয়ার আগে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি ও কৃষ্ণসাগরের শস্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে তুরস্ক সফরে যান জেলেনস্কি। সেখানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।