রবিবার, ২ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন কোথায়?
রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন কোথায়?
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন রুশ সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কম্যান্ডার। কিন্তু সপ্তাহ-খানেক আগে ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনীর ব্যর্থ বিদ্রোহের পর থেকে তিনি লাপাত্তা।
অভিযোগ রয়েছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জেনারেল সুরোভিকিন নিষ্ঠুর এক সামরিক কৌশল নিয়ে সরকার-বিরোধীদের কাবু করেছিলেন। সে কারণে তাকে অনেকেই বলেন ‘জেনারেল আরমাগেডন’ অর্থাৎ চূড়ান্ত যুদ্ধের জেনারেল।
ওয়াগনারের সাথে সুরোভিকিনের সম্পর্ক কী?
জেনারেল সুরোভিকিন রুশ বিমান ও মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কম্যান্ডার। রাশিয়ার ইউক্রেন অপারেশনের ডেপুটি কম্যান্ডার তিনি।
গত বছর অক্টোবর থেকে এবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তারপর তার পদাবনতি হয়।
২৪ জুন ওয়াগনার বাহিনীর সৈন্যরা মস্কোর দিকে যাত্রা শুরু করলে এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় “প্রেসিডেন্ট পুতিনের কম্যান্ড এবং ইচ্ছার” প্রতি অনুগত থাকার জন্য জে. সুরোভিকিন তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। সে সময় তার ইউনিফর্মে এমন কোনো প্রতীক ছিল না যাতে তার র্যাঙ্ক বোঝা যায়। মুখের ভাব এবং কথায় তাকে অসংলগ্ন দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তিনি যেন কোনো চাপে রয়েছেন।
এর পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। কোনো খবর নেই।মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয় ওয়াগনারের বিদ্রোহের কথা জে. সুরোভিকিন আগ থেকেই জানতেন, এবং তার সাথে সত্যিই এই বিদ্রোহের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না তা রুশ গোয়েন্দারা এখন তা তদন্ত করছে।তবে, জে সুরোভিকিনের মেয়ে ভেরোনিকাকে উদ্ধৃত করে রুশ মিডিয়া বাজা বলেছে: “তার (বাবার) কিছু্ই হয়নি। তিনি যথারীতি কাজ করছেন।“
কিন্তু জে. সুরোভিকিনের খোঁজ জানতে চাইলে ক্রেমলিন কোনো উত্তর দেয়নি। সাংবাদিকদের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
ওয়াগনার প্রধান প্রিগোশিনের সাথে তার সম্পর্ক কী
ধারণা করা হয় ওয়াগনার নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের সাথে জে. সুরোভিকিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলের জন্য যখন ওয়াগনার বাহিনী লড়াই করছিল, পিগ্রোশিন বলেছিলেন জে. সুরোভিকিনই প্রতিরক্ষা দপ্তরে প্রভাব খাটিয়ে প্রয়োজনীয় অস্ত্র-সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেনপ্রিগেশিন এও বলেন, রুশ সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে ওয়াগনার গোষ্ঠীর যোগাযোগ রক্ষার জন্য জে. সুরোভিকিনকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
“তিনিই একমাত্র তারকাধারী জেনারেল যিনি জানেন কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়,” জে. সুরোভিকিনের প্রশংসা করতে গিয়ে প্রিগোশিন সেময় বলেন। “অন্য কোনো জেনারেলই (রুশ সেনাবাহিনীর) এমন কাণ্ড-জ্ঞানসম্পন্ন নন।“
গত মে মাসে প্রিগোশিন বলেন ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর শীর্ষ কম্যান্ডার হিসাবে জে. সুরোভিকিনকে নিয়োগ করা উচিৎ।
ডোসিয়ের সেন্টার নামে রুশ একটি অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান দাবি করে গোপন নথিপত্র দেখে তারা জেনেছে যে ৩০ জন সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওয়াগনারের “ভিআইপি” তালিকায় রয়েছেন, জে. সুরোভিকিন তাদের একজন।
কিভাবে জে. সুরোভিকিন ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্ত হন
২০২২ সালের ৮ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট পুতিন জে, সুরোভিকিনকে ইউক্রেনে তার “বিশেষ সামরিক অভিযানের” প্রধান অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ করেন। তখনই প্রথম ঐ পদটি তৈরি করা হয়। এর আগে, তিনি দক্ষিণ ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
সেসময় ইউক্রেন সেনাবাহিনী রাশিয়ার দখল থেকে ডনবাস অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা পুনর্দখল করতে সমর্থ হয়। রাশিয়া সেই অবস্থা বদলে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে।জে. সুরোভিকিনের দুর্নাম রয়েছে যে যুদ্ধক্ষেত্রে নিষ্ঠুর কৌশল নিতে তিনি পিছপা হন না।
তিনি ইউক্রেন অপারেশনে দায়িত্ব নেওয়ার পর রুশ বাহিনী পুরো শীতকালজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো টার্গেট করে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা শুরু করে।
দখলকৃত খেরসন শহর এবং নিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরে মোতায়েন ৩০,০০০ রুশ সৈন্য যাতে ঘেরাও না হয়, তার জন্য তিনি ঐ সৈন্যদের সেসব জায়গা থেকে সরিয়ে আনেন।
তবে জে. সুরোভিকিন রণক্ষেত্রে তেমন কোনো সাফল্য নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন। ফলে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তাকে সরিয়ে সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে ইউক্রেন অপারেশনের নেতৃত্ব দেন।
গেরাসিমভের তিন ডেপুটির একজন হন সুরোভিকিন।কেন সুরোভিকিনকে ‘জেনারেল আরমাগেডন’ বলা হয়
জে. সুরোভিকিনের জন্ম সাইবেরিয়ার নোভোসিবিরস্কে। তার বয়স ৫৬।
তিনি প্রথম নজর কাড়েন ১৯৯১ সালে আগস্ট মাসে। তিনি তখন সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। মিখাইল গর্বাচভের ক্ষমতাচ্যুতির বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় মানুষজন ব্যারিকেড তৈরি করলে তিনি তা ভাঙ্গার জন্য সৈন্যদের নির্দেশ দেন।
সেসময় তিনজন বিক্ষোভকারী মারা যায়, কিন্তু সুরোভিকিনের কোনো শাস্তি হয়নি এই যুক্তিতে যে তিনি তার ওপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশমতো কাজ করেছিলেন।
এরপর তিনি নব্বইয়ের দশকে তাজিকিস্তানে যুদ্ধে এবং তারপর চেচনিয়ার যুদ্ধে অংশ নেন।
চেচনিয়ায় তার অধীনস্থ সৈন্যরাই কয়েকবার তার বিরুদ্ধে স্থানীয় বেসামরিক লোকজনের ওপর নির্মম আচরণের অভিযোগ এনেছিলেন।২০১৭ সালে জে. সুরোভিকিনকে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সমর্থনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
সিরিয়ায় আট মাস দায়িত্ব পালনের সময় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ ওঠে। এমনকি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ এবং হাসপাতালে বোমাবর্ষণের অভিযোগও ওঠে তখন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলে, জে. সুরোভিকিন এবং অন্যান্য রুশ এবং সিরিয়ান কম্যান্ডাররা ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ইদলিব প্রদেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় জেনে-বুঝে বেসামরিক এলাকায় এবং অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালিয়েছেন।
সেসময়, রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ এবং হাসপাতালে বোমা হামলার জন্য রুশ বাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়।
রুশ সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।
সিরিয়া থেকে ফেরার পর জে. সুরোভিকিনকে রুশ অ্যারোস্পেস ফোর্সেস অর্থাৎ বিমান এবং মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা করা হয়। তাকে ‘হিরো অব রাশিয়া’ অর্থাৎ রাশিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক খেতাবে ভূষিত করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।